চলছে বিশ্ব জুড়ে পরিব্যপ্ত বিশ্বায়ন, যার কবলে বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি আবর্তিত হচ্ছে। এই বিশ্বায়ন বিশ্বের দেশসমূহের জন্য সুযোগ হিসাবে অবির্ভূত হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের ব্যাপক প্রস্তুতি প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পশ্চাৎপদ জ্ঞানীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে এই প্রস্তুতি গ্রহণ সম্ভব নয়। সেজন্য দেশে বিশ্বায়ন সম্পর্কিত জ্ঞানচর্চার অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন।
বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে আন্ত:দেশীয় বিনিময় সম্পন্ন হয় বলে, এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া বর্তমানে পূঁজিবাদের কবলে নিপতিত হওয়ায়, এটিকে পূঁজিবাদী কুশলী দেশ ও বেনিয়া প্রতিষ্ঠানসমূহ অর্থনৈতিক শোষণের সুযোগ হিসাবে নিয়েছে। পূঁজিবাদী আদর্শের খপ্পরে পড়ে, বিশ্বায়ন এখন কেবলমাত্র বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিদৃষ্ট হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি দৈশিক গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তঃদেশীয় পরিসরে পরিব্যাপ্তি লাভ করেছে। এর ফলে সারা বিশ্ব একটি পরিব্যাপ্ত সমাজে পরিণত হয়েছে এবং অভিন্ন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ যুগপৎ অংশ গ্রহণ করছে, যার চালিকা শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে-পূঁজিবাদী শক্তি।
এই প্রক্রিয়ার ঘূর্ণাবর্তে বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সূচীত হচ্ছে, যার নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি রয়েছে পূঁজিবাদী শক্তির হাতে। সেজন্য বাংলাদেশ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে যতো না সুবিধা পাচ্ছে, তার চেয়েও বেশী অর্থ পাচার ও অপসংস্কৃতির প্রসার ইত্যাদি নানা অনাঙ্খিত বিষয়ের শিকারে পরিণত হচ্ছে। এর কারণ, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটিতে পূঁজিবাদী কুশলী দেশ ও বেনিয়া প্রতিষ্ঠানসমূহ থাবা বিস্তার করে আছে। এই পূঁজিবাদী কুশলী দেশ ও বেনিয়া প্রতিষ্ঠানসমূহকে ডিঙ্গিয়ে দেশ ও জাতির জন্য সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আহরণ করতে হলে, বাঙ্গালি জাতিকে কৌশলগতভাবে প্রস্তুত হতে হবে।
বর্তমান কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কোমল অবকাঠামোতে বিশ্বায়নের পূর্ণ সুবিধা আহরণের মতো কৌশলগত প্রস্তুতি সম্ভব নয়। সেজন্য বিদেশবিদ্যা ও বিদেশি ভাষায় পারদর্শী অঞ্চল ভিত্তিক চিন্তকবর্গ (Think Tank) গড়ে তুলতে হবে। আর আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটকে বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতিতে জ্ঞানদীপ্ত চিন্তকবর্গ গড়তে সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রক্রিয়ায় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে যদি গতি ফিরে আসে, তবে এ দেশ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা লাভে করবে বলে আমার বিশ্বাস।
অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি
পরিচালক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়