সময়টা ২০১৯, ডেঙ্গুর আক্রমণে ঢাকাবাসী জর্জরিত। ডেঙ্গু হলেই হসপিটাল, চিকিত্সার চিন্তা, আর আমাদের মত সাধারণ মানুষদের চিন্তা রক্ত জোগাড় করতে হবে। Platelet কমে গেলে Blood manage করতে হবে। কিন্তু সবার পক্ষে কি রক্ত জোগাড় করা সম্ভব? আবার প্রাণঘাতী জীবাণুর আক্রমণও বসে থাকে না। এমনি এক মুহূর্তে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা মৌসুমী Platelet বাড়ানোর জন্য Eltrombopag নামক একটি ঔষধ প্রয়োগ করে গুরুতর ডেঙ্গু রোগী সারিয়ে তোলেন। এই সুফলের ফলে তিনি আরও চারজন অসহায় রোগীর চিকিত্সা করেন। কিন্তু দুইজন ভাল ফল পান, দুইজন মোটামুটি আর একজনের ফলাফল আশানরুপ পাওয়া যায় না। ডা মৌসুমী বিষয়টি আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগের ড. সজীব চক্রবর্তী এবং অধ্যাপক ড. এ.এইচ.এম. নুরুন নবীর সাথে । সেই থেকেই শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, ছাত্র/ছাত্রীরা মিলে এই ঔষধটির কার্যকারীতা ডেঙ্গু রোগীদের উপর প্রমানের জন্য Phase II Clinical Trial টি সম্পন্ন করেন যা বিশ্ববিখ্যাত Medical Journal The Lancet Group এর EClinicalMedicine এ সদ্য প্রকাশিত হয়েছে।
যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক ফার্মাসিউইটিকাল কোম্পানী জিএসকে ও নোভার্টিস এর যৌথ উদ্যোগে তৈরী Eltrombopag শুরুতে শুধুমাত্র ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বা ক্রনিক লিভার ডিজিস জনিত অনুচক্রিকা স্বল্পতা সংশোধনে প্রয়োগ করা হতো। কিন্তু উপসর্গ জনিত মিল থাকার কারণে পরবর্তীতে ডেঙ্গু জনিত অনুচক্রিকা স্বল্পতা সমাধানে এই ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য এই গবেষণাটি পরিকল্পনা করা হয়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই ধরণের কৌশলকে Drug repurposing বা reprofiling বা ঔষধের কাজের পুনর্বিন্যাস বলা হয় যেখানে একটি ওষুধকে তার মূল প্রয়োগক্ষেত্রের বাইরে একটি সদৃশ ব্যাধি নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।গবেষণা চলাকালীন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বেটার লাইফ হাসপাতাল ও এ এম জেড হাসপাতাল থেকে পরিকল্পনামাফিক ডেঙ্গু রোগীদেরকে এই গবেষণায় অন্তর্ভূক্ত করা হয় ও তাদেরকে তিনটি গ্রূপে বিভক্ত করে দুটি গ্রূপকে দুটি ভিন্ন মাত্রায় Eltrombopag দেয়া হয় ও একটি গ্রূপকে কন্ট্রোল হিসেবে রাখা হয়। ওষুধ প্রদানের একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর রোগীদের অণুচক্রিকার মাত্রা পরীক্ষা করা হয় এবং পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ এর পর দেখা যায় ওষুধ প্রাপ্ত দুটি গ্রূপেই শতকরা ৯১ শতাংশ রোগী যথাসময়ে স্বাভাবিক অনুচক্রিকা মাত্রা ফিরে পান, যেখানে কন্ট্রোল গ্রূপে ৫৫ শতাংশ রোগী ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক মাত্রা অর্জন করেন। এছাড়াও একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে প্রত্যেক গ্রূপের রোগীদের অপরিপক্ক অনুচক্রিকার মাত্রা নির্ণয় করা হয়। এক্ষেত্রেও ওষুধ প্রাপ্ত দুটি গ্রূপে কন্ট্রোল গ্রূপের তুলনায় উচ্চ মাত্রায় অপরিপক্ক অনুচক্রিকার উপস্থিতি পাওয়া যা ওষুধটির অনুচক্রিকা স্বল্পতা নিরাময়ে কার্যকারিতার প্রমান দেয়। ওষুধ প্রাপ্ত দুটি গ্রূপে ওষুধ জনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কোনো প্রমান পাওয়া যায় নি। এই Phase II গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে ডেঙ্গু জনিত অনুচক্রিকা স্বল্পতা নিরাময়ে Eltrombopag এর প্রয়োগ কার্যকর ও নিরাপদ।
এখানেই শেষ নয়। ভাবনাটা যেখান থেকে শুরু, ঔষধের প্রতিক্রিয়ার তারতম্যটা কি আমাদের বংশগতির উপাদান ডি এন.এ. তে থাকা ভিন্নতার কারণে কিনা সেই বিষয়টির কাজও আমরা গুছিয়ে এনেছি । আমাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল এই ওষুধটি নিয়ে পরবর্তিতে Phase III ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করতে সহায়ক হবে, যা আরও দৃঢ়ভাবে ডেঙ্গু নিরাময়ে ওষুধটির কার্যকারিতা শক্তভাবে প্ৰতিষ্ঠি
গবেষণাকর্মটি পরিচালনার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ আহমেদুল কবির এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.এইচ.এম. নুরুন নবী নেতৃত্ব প্রদান করেেন। ড. সজীব চক্রবর্তী তার শ্রম আর মেধা দিয়ে গবেষণাকর্মটি সার্বিকভাবে এগি
আমাদের সার্থকতা তখনই হবে যখন এই ঔষধের মাধ্যমে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা সুফল পাবেন। সবাইকে রক্তের জন্য দৌড়াতে হবে না।
Link of the article