মশা মারতে কামান দাগার প্রবাদ বাক্যটি আমাদের সকলেরই জানা। মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য আশির দশকে হেলিকপ্টার বা সী-প্লেন দিয়ে মশার ঔষধ স্প্রে করা হয়েছিল। গতবার ডেঙ্গু যখন ভয়াবহ রূপে হাজির হলো তখন সিটি কর্পোরেশন দেরিতে হলেও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সকালে লার্ভা মারার জন্য লার্ভিসাইড আর বিকেলে মশা মারার জন্য অ্যাডালটিসাইড ব্যবহার করেছিল। মশার অত্যাচারে ঘরে যখন টিকতে পারি না, তখন বাসাতে আমরা প্রায়ই এরোসোল ব্যবহার করে থাকি। যারা পারফিউম বা বডি স্প্রে ব্যবহার করেন সেটিও একটি এরোসোল। বায়ো-এরোসোল একধরনের এরোসোল। তাই মশা এবং এরোসোল নিয়ে শুরুতে একটু লিখলাম।
বায়ো-এরোসোল সাধারণত জলীয়বাষ্প-কণা, ধুলোবালি, সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় অণুজীব, অণুজীবের স্পোর, ফুলের পরাগরেণু ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। বায়ো-এরোসোলের আকার সাধারণত ০.০২-১০০µm হয়ে থাকে। শিষ্টাচার ভুলে আমরা যখন হাঁচি-কাশি দেই তখন আমরা জেনে বা না জেনেই বায়ো-এরোসোলের সৃষ্টি করি। এই বায়ো-এরোসোলের মধ্যেই থাকতে পারে অসংখ্য রোগজীবাণু। জমিদার প্রথায় শুনেছি, জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ হাঁচি-কাশি দিলেই জমিদার বাবু রেগে গিয়ে বলতেন, “কে কাশি দিল?” আর উত্তরে প্রজা ভয়ে ভয়ে বলতো, “বাবু গিলে ফেলেছি”। জমিদার বাবুরা বায়ো-এরোসোলের বিষয়টি জানত না। তবে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে রোগ ছড়ানোর বিষয়টি জানতেন কিনা তা জানি না! সেখান থেকেই হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারের বিষয়টি আসতে পারে। এই শিষ্টাচারটি পুরোপুরি একটি বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের এই আধুনিক যুগেও শিষ্টাচারের বিষয়টি আমরা সময়-অসময়ে ভুলে যাই। হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করি না। এবার করোনা নামক দানবটি আমাদেরকে নাকে খত দিয়ে শিষ্টাচার শিখিয়ে দিল।
আকার এবং আর্দ্রতার উপর ভিত্তি করে তিন প্রকার বায়ো-এরোসোল হতে পারে। যেমন ড্রপলেট (droplet), ড্রপলেট নিউক্লেই (droplet nuclei) এবং ছোঁয়াচে ধুলা (infectious dust)। সাধারণত হাঁচি-কাশি এমনকি কথার বলার সময়ও ড্রপলেটের সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শ্বাসনালী থেকেই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ড্রপলেট বাতাসে ছড়াতে পারে এবং সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে। ড্রপলেট আকারে একটু বড় এবং এর আকার সাধারণত ১০০µm এর মত। ড্রপলেটটি ভারী হওয়ায় অনেক দূর ভেসে থাকতে পারে না। সেকারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১ মিটার বা ৩ ফুট দূরত্বকে নিরাপদ দূরত্ব মনে করছে। ভাইরাস ড্রপলেটটি বেশিদূর যেতে না পারলেও নিকটস্থ বস্তুর উপরিতলে পতিত হয়ে মানুষের হাতের সংস্পর্শে সুস্থ ব্যক্তিকে সংক্রমিত করতে পারে। করোনার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
একটা আশঙ্কা হয়তো রয়েই গেল। করোনাবাহী ড্রপলেট উষ্ণ এবং শুষ্ক আবহাওয়ায় ড্রপলেটের জলীয় অংশ শুকিয়ে গিয়ে ড্রপলেট নিউক্লেই-এ পরিণত হতে পারে। ভাইরাসটি জীব ও জড় উভয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বিধায় জলীয় বাষ্পহীন ড্রপলেট নিউক্লেই রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে। সেই ক্ষমতা কত সময় সেটি আমার জানা নেই। ড্রপলেট নিউক্লেই আকারে ছোট এবং হালকা হওয়ায় বাতাসে দীর্ঘক্ষণ ভাসতে পারে এবং ড্রপলেটের তুলনায় বেশিদূর যেতে পারে বলে আমার মনে হয়। একারণে হয়তো আর্দ্র আবহাওয়া থেকে শুকনো আবহাওয়ায় ড্রপলেট থেকে ড্রপলেট নিউক্লেই সৃষ্টির মাধ্যমে ভাইরাসটি বেশিদূর ছড়াতে পারে। আমার অনুমান সঠিক হলে আর্দ্র আবহাওয়ায় হয়তো ভাইরাসটির বিস্তার কিছুটা হলেও কম হবে। আজ বিকেলে ঢাকায় ভালো বৃষ্টি হলো। করোনা দূর্যোগে এই বৃষ্টি কি কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিবে নাকি আবার ডেঙ্গু ছড়াবে? অদৃশ্য ভয় সব সময় তাড়া করছে বলেই প্রশ্নটি রেখে দিলাম।
সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং জীববিজ্ঞানের একজন শিক্ষকের অভিজ্ঞতার আলোকেই এটি লেখা। কোনো গবেষণালব্ধ ফলাফল নয়। আসুন শিষ্টাচারে অভ্যস্ত হই। করোনা থেকে মুক্ত থাকি। জরুরি প্রয়োজন না হলে ঘরে থাকুন। প্রয়োজনে বের হলে জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। সকলে মিলে করোনা ঝড়ের গতিকে থামিয়ে দেই।
ড. মিহির লাল সাহা
অধ্যাপক
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফেসবুক পোষ্টঃ ২৩ এপ্রিল, ২০২০
24 November, 2020 |
17 July, 2020 |
24 May, 2020 |
24 May, 2020 |
21 May, 2020 |
10 May, 2020 |
10 May, 2020 |
04 May, 2020 |
03 May, 2020 |
03 May, 2020 |
02 May, 2020 |
02 May, 2020 |
02 May, 2020 |
02 May, 2020 |
30 April, 2020 |
30 April, 2020 |
29 April, 2020 |
29 April, 2020 |