করোনার কারণে ঘরে বসে যখন সময় কাটেনা তখন স্টিভ জোনস-এর একটি বঙ্গানুবাদ বই ‘জিনের ভাষা’ পড়ছিলাম। বইটির বঙ্গানুবাদক হলেন আমার একজন প্রিয় শিক্ষক উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের স্বনামধন্য প্রয়াত অধ্যাপক ড. ম. আখতারুজ্জামান। ১৯৮০ সালে ১ম বর্ষে স্যারের এরকম আরো একটি বঙ্গানুবাদ বই “জীবাণু থেকে ঔষধ” পড়েছিলাম। “জীবাণু থেকে ঔষধ” বইটি পড়তে উৎসাহিত করেছিলেন আরো একজন প্রিয় শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক ড. মাহবুবার রহমান খান। “জীবাণু থেকে ঔষধ” বইটির মূল লেখক কে ছিলেন সেটি আমার মনে নেই। মাতৃভাষায় “জীবাণু থেকে ঔষধ” বইটি আমকে অণুজীববিজ্ঞানে আগ্রহী হতে সাহায্য করেছিল। বইটি কারও সংগ্রহে থাকলে তাঁর থেকে সংগ্রহ করে আবার পড়তে চাই। বিজ্ঞানের বই পড়তে যারা ভালোবাসেন তাঁদের জন্য অবশ্যই এই বই দুটি জীবাণু, বংশগতি এবং মানুষ নিয়ে আমাদের নানা অজানাকে জানতে সাহায্য করবে।
বইটির একাদশ অধ্যায় ‘মারাত্মক জ্বর’-এর অংশবিশেষ নিয়েই আজকের লেখা। একাদশ অধ্যায়ের শুরুর বর্ণনা কিছুটা এরকম ‘পূর্ব আফ্রিকার পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম পর্তুগীজ ভ্রমণকারীর বিবরণে একটি তিক্ত অভিযোগ আছেঃ “মনে হয় যে আমাদের পাপের জন্য বা ঈশ্বর অন্য কোনো অজ্ঞেয় বিচারের রায় হিসেবে যেখানেই আমরা নৌপথে যাই সেখানে একজন দেবদূত প্রজ্জ্বলিত তরবারী দিয়ে মারাত্মক জ্বর এনে দেয়”।’ তিনশত বছর পরে যত ইংরেজ সেখানে গিয়েছিল তার অর্ধেক এক বছরের মধ্যে মারা যায়। একবিংশ শতাব্দীতে আজ বিশ্ব করোনা মহামারিতে বিধ্বস্ত। বইটির মূল বিষয়বস্তু জিনের ভাষা বিধায় অন্য একটি জায়গায় লেখা আছে, “রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিভিন্ন স্থানের লোকদের মধ্যে বংশধারাগত পার্থক্য আছে বলে মনে হয়”। জীববিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমারও তেমনই ধারণা। এটি বোঝাতেই আমার গত লেখাটিতে রোগজীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতা এবং মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে একটু লিখেছিলাম। বইটির আরেকটি স্থানে বলা হয়েছে “পৃথিবীর অধিকাংশ রোগ এখনও বেশ বিপজ্জনক। প্রতি বছর দশ মিলিয়ন লোক হামে এবং পাঁচ মিলিয়ন লোক ডায়রিয়াতে মারা যায়”। সেই সাথে ‘এইডস’ এবং ‘ইবোলা’র কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এইডস সম্পর্কে বলা হয়েছে “এইডস হয়ত একসময় মৃদু ছিল। কিন্তু সম্প্রতি অতিশয় যৌনক্রিয়ারত পূর্ব আফ্রিকার ট্রাক ড্রাইভার ও নিউইয়র্কের সমকামী ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ২০ বছর আগে একটি মারাত্মক ভাইরাসে রূপান্তরিত হয়েছে।” করোনার মত হয়ত এটিও এইডস ভাইরাসের মিউটেশনের বহিঃপ্রকাশ। আমার গত লেখাটিতে মিউটেশনের একটু ধারণা দিয়েছিলাম। শুধু রোগজীবাণুরই মিউটেশন ঘটে তা নয়, মানুষেও ঘটে। নানা কারণে মানুষের মিউটেশন ঘটতে পারে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে মানব সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, ভেজাল খাদ্য এবং দূষণের কারণে মারাত্মক মিউটেশন ঘটতে পারে।
আমার অগ্রজ এবং অত্যন্ত প্রিয় বড় ভাই ‘রিভু অনিকেত’-এর তাঁর ফেসবুক পাতায় “মুক্তিযোদ্ধা ভাইরাস” নিয়ে একটি লেখা পড়লাম। লেখাটির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানের ছাত্র এবং প্রয়াত অধ্যাপক ড. মাহবুবার রহমান খান স্যারের কাছে অণুজীববিজ্ঞান পড়ার সুযোগ পেয়েছি তাঁরা নিশ্চয়ই আমার মত স্যারের অণুজীববিজ্ঞানের ক্লাসে ‘হাইতির স্বাধীনতার ভূমিকায় জীবাণু’-এর গল্পটি শুনেছেন। ভাইয়ের লেখাটি পড়ার সময় আমার প্রিয় স্যারের কথা মনে পড়ে গেল।
মানব সভ্যতা যেমন এগিয়েছে তেমনই শিষ্টাচার, পরিবেশ, দূষণ ইত্যাদি বিষয় নানাভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। এখন সময় এসেছে আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়ার। স্টিভ জোনস তাঁর বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন “আমাদের আছে দুটি অনন্য বৈশিষ্ট্যঃ অতীতকে জানা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা”। মানব জাতি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বহু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তেমনই একবিংশ শতাব্দীতে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু আর করোনার মত দানবেরা আমাদেরকে অক্রমণ করেছে। বিজ্ঞানের ভাষায় মানুষ হলো পৃথিবীর সর্বাধিক অভিযোজনক্ষম প্রাণী। অভিযোজন ক্ষমতা আর বুদ্ধি দিয়ে মানুষ টিকে থাকবেই। ইতিহাস সেটিই বলে। সকল অমানিশা কেটে নতুন সূর্যের আলোকে আলোকিত হবে এই পৃথিবী। জয় হবে মানুষের।
ড. মিহির লাল সাহা
অধ্যাপক
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফেসবুক পোষ্টঃ ২২ এপ্রিল, ২০২০
24 November, 2020 |
17 July, 2020 |
24 May, 2020 |
24 May, 2020 |
21 May, 2020 |
10 May, 2020 |
10 May, 2020 |
04 May, 2020 |
03 May, 2020 |
03 May, 2020 |
02 May, 2020 |
02 May, 2020 |
02 May, 2020 |
02 May, 2020 |
30 April, 2020 |
30 April, 2020 |
29 April, 2020 |
29 April, 2020 |