করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি আজ অবরুদ্ধ। ধেয়ে আসছে মহামন্দা। আশঙ্কা করা হচ্ছে এই মহামন্দার মাত্রা ১৯২০ সালের মহামন্দা থেকেও ভয়াবহ হতে পারে। বিশ্বের বড় বড় এবং শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর সরকার প্রধানদের কপালে দুশ্চিন্তার কালো ছাপ স্পষ্ট। এটা যতটা কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যার এবং এর ফলে মৃত্যু হারের ঊর্ধমূখী জন্য, ঠিক ততটাই অর্থনীতিতে মহামন্দার আশঙ্কা নিয়ে। এই দুশ্চিন্তায় জার্মান অর্থমন্ত্রী থমাস শেফার আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুশ্চিন্তা বাংলাদেশের মতো মধ্য আয়ের অর্থনীতির জন্যও কম না, বরং বহুমূখী। করোনা মোকাবেলার প্রচলিত লকডাউন থিসিস অনুসরণ করার ফলে বলা চলে কৃষি উৎপাদন ছাড়া পুরো অর্থনীতি আজ অবরুদ্ধ। এর ফলে একদিকে যেমন অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, অন্য দিকে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া কয়েক কোটি মানুষের আহারের চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ।
অনেক অর্থনীতিবিদ এবং সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, এই মুহূর্তে অর্থনেতিক ক্ষতির হিসাব নিকাশের চেয়ে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য করোনা মোকাবেলায় বেশি জোর দেয়া উচিৎ। অর্থনীতিবিদদের মতে, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে দুই-এক বছরের মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব । তবুও যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশের সরকার অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ইতোমধ্যে বড় অঙ্কের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন । বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সরকারও বড় অঙ্কের (প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা) প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই প্যাকেজ অর্থনীতিতে কতটুকু গতি ফিরিয়ে আনতে পারবে তা একদিকে নির্ভর করবে স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি মোট ক্ষতির পরিমাণের উপর । অন্যদিকে, তা নির্ভর করবে প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের উপর। এই নিবন্ধে ২০১৮-১৯ সালের নমিনাল (Nominal) জিডিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে স্বল্প মেয়াদি বা চলতি ক্ষতির পরিমাণ কত হবে তা হিসাব করার একটা প্রয়াস নেয়া হয়েছে। এই হিসাবটি একদিকে যেমন সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের যথেষ্ট কি না তা নিরূপণ করতে সাহায্য করবে; অন্যদিকে প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের উপর জোড় দেওয়ার তাগিদও অনুভূত হবে।
আমরা জানি যে বাংলাদেশের অর্থনীতির তিনটি বড় খাত হচ্ছে কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাত। প্রত্যেকটি খাতের কয়েকটি উপখাত আছে। কৃষির প্রধান উপখাতগুলো হল শস্য উৎপাদন, প্রাণী সম্পদ এবং মৎস সম্পদ। স্বল্প মেয়াদে এই সকল উপখাতে উৎপাদন না কমলেও দেশি এবং বিদেশী অর্থনীতিসমূহ অবরুদ্ধ থাকার কারণে এসকল উপখাতের উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্যের উপর নিম্নমূখী প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর ফলে অর্থনীতিতে প্রতি দিন প্রায় ২শ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
শিল্পে খাতে বিশেষ করে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে ক্ষতির মাত্রা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ খাতে প্রতি দিনের অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১শ ৩১ কোটি টাকা । অর্থনৈতিক ক্ষতি সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে সেবা খাতে । নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বেচা-কেনা এবং জরুরি সেবা ব্যতীত এই খাত মূলত অবরুদ্ধ। সব ধরণের যোগাযোগ (সড়ক, রেল, নৌ এবং আকাশ পথ), পর্যটন, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, রিয়েল ইস্টেটসহ সকল প্রকার সেবা একেবারেই বন্ধ । স্বাস্থ্য খাতের বেসরকারী অংশটিতেও এক প্রকার অচল অবস্থা বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে সেবা খাতে প্রতি দিনের অনুমিত চলতি ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা ।
তাই প্রতি দিন কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতে গড়ে মোট অনুমিত চলতি ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ৩ হাজার ৩শ কোটি টাকা । প্রতি দিনের এই চলতি ক্ষতির পরিমাণ লকডাউন অবস্থার মেয়াদ বৃদ্ধির সাথে সাথে ঊর্ধমূখী হতে পারে যা এই মুহূর্তে হিসাব করা সম্ভব হয়নি । ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩১ দিনের অবরুদ্ধ অবস্থায় অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ দাড়াবে কমপক্ষে ১ লক্ষ ২ হাজার ৩শ কোটি টাকা । যেহেতু পুরো এপ্রিল মাসকে করোনার ভয়াবহতা হিসেবে আশঙ্কা করা হচ্ছে তাই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত থাকলে এই ক্ষতির পরিমাণ দাড়াবে প্রায় ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮শ কোটি টাকা । চীন, ইতালী, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা চলে লকডাউন অবস্থা পুরো মে মাস এমনকি জুন মাসেও অব্যাহত রাখার প্রয়োজন হতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে মে মাস শেষে অনুমিত চলতি ক্ষতির পরিমাণ দাড়াবে ২ লক্ষ ১৭ হাজার ৮শ কোটি টাকা যা গত অর্থবছরের মোট দেশীয় উৎপাদনের প্রায় ৯ শতাংশ।
মধ্য মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির পরিমাণ এই মুহূর্তে হিসাব করা সম্ভব না হলেও তা আঁছ করা অসম্ভব নয়। অবরুদ্ধ কাল দীর্ঘস্থায়ী হলে বেশিরভাগ ছোট-খাটো ব্যবসা এবং ক্ষুদ্র উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সহজেই ঘুরে দাড়াতে পারবে না। ফলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ (Backward linkage) এবং ফরওয়ার্ড লিঙ্কেজ (Forward linkage) চেইন মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যার ফল সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করবে । ধারণ করা হচ্ছে কার্যকরী ভ্যাকসিন উদ্ভাবন এবং এর ব্যাপক ব্যবহার ছাড়া গুটি বসন্তের মত বিশ্বব্যাপী এই রোগটি নির্মূল করা সম্ভব না। তাই করোনার কার্যকরী ভ্যাকসিন উদ্ভাবন এবং বিশ্বব্যাপী এর ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অন্য দেশগুলো আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ রাখতে পারে। ফলে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যা বর্তমানে অনেকটা দৃশ্যমান । বিশ্ব বাজারে তৈরি পোষাকের চাহিদা অনেকাংশে কমে যেতে পারে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানীমূখী তৈরি পোষাক শিল্প আরো বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
আমরা আশা করি মে মাস শেষে অর্থনীতি ধাপে ধাপে উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে এবং সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করবে। যদি মে মাসের পরেও অর্থনীতি উন্মুক্ত করা সম্ভব না হয় তাহলে রাজস্ব আদায় এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব পরবে যা কাটিয়ে উঠা অনেক কঠিন হতে পারে। ক্ষতি কাটিয়ে উঠার উপায়গুলো তাই আগে থেকেই খোঁজতে হবে।
করোনা প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশিজনিত শুদ্ধাচার মেনে চলাসহ সামাজিক দূরত্বের নীতিমালার উপর জোর দেওয়ার মূল কারণ দুইটি; (১) এক সাথে অনেক মানুষ আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধ করে স্ব স্ব দেশের স্বাস্থ্য ব্যস্থার করোনা মোকাবেলার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং (২) ভ্যাকসিন এবং প্রতিষেধক তৈরি করার জন্য যে সময় দরকার সেই পর্যন্ত আক্রান্তের হারকে সহনীয় মাত্রায় রাখা । উন্নত বিশ্বের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহজতর হওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে কোভিড-১৯ এর রোগির সংখ্যা হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে । তাই করোনা মোকাবেলায় সাধারণ লকডাউন পদ্ধতি কতটুকু কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় । ধারণা করা হচ্ছে এ সকল দেশ লকডাউন শুরু করতে ধীরনীতি অনুসরণ করেছে । তবে শুরুতেই লকডাইন, এগ্রেসিভ টেস্ট এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, আইসল্যান্ড এবং জার্মানী এক্ষেত্রে বেশ সফল হয়েছে।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতায় দীর্ঘমেয়াদে কার্যকারীভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুব কঠিন । উন্নত বিশ্বের সরকার এবং জনগণের আর্থিক সক্ষমতা থাকায় অবরুদ্ধ অবস্থায় মানুষের মধ্যে খাবারের জন্য হাহাকার তেমন নাই। করোনা মহামারি মোকাবেলায় উন্নত বিশ্বের তুলনায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক অসুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের সরকারকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বহুমূখী পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে । একদিকে যেমন জনগণকে সামাজিক দূরত্বে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আর্মি, পুলিশ, বিডিআরসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে এবং করোনা টেস্টের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ কোভিড-১৯ ম্যানেজমেন্টের জন্য বিনিয়োগ করতে হচ্ছে । অন্যদিকে কয়েক কোটি শ্রমজীবী মানুষের আহার প্রদানের জন্যও চিন্তা করতে হচ্ছে। সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় খাদ্য-সামগ্রী সময়মত শ্রমজীবি মানুষের দোরগড়ায় পৌঁছাতে না পারলে তারা জীবিকার তাগিদে ঘরের বাহিরে বের হবে যার লক্ষণ স্পষ্ট । ফলে জনগণ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে । এমনকি আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরব-উজ্জল মর্যাদাও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
আমাদের মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশে বোরো মৌসমের ধান কাটা আসন্ন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সারাদেশ অবরুদ্ধ থাকার ফলে ধান কাটার কৃষি শ্রমিক পাওয়া দু:সাধ্য । সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং মুন্সিগঞ্জসহ সহ আমাদের শষ্য ভান্ডারগুলোতে সমস্যা আরো প্রকট। মৌসুমি ঝড়-বৃষ্টি শুরু না হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে এখনো পর্যন্ত ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যতদূর জানা যায় এ মৌসুমে বোরোর ফলনও ভালো হয়েছে। উল্লেখ্য, কৃষি শ্রমিকের অভাবে কৃষকরা সময়মত ফসল তুলতে না পারলে দেশ চরম খাদ্য সংকটে পড়বে যা মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠবে। তাই ধান কাটার কাজ কিভাবে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায় তার জন্য আশু সিদ্ধান্ত জরুরি । প্রয়োজনে সরকারী ব্যবস্থাপনায় উত্তরবঙ্গ বা অন্যান্য স্থান থেকে কৃষি শ্রমিক এনে এ সমস্ত এলাকার ধান কাটার কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে। তবে শ্রমিক নির্বাচনের পূর্বে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। ধান কাটার কাজ সম্পন্ন করার সময় শারীরিক দূরত্বসহ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ সমস্ত শ্রমিকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকগণের নেতৃত্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ সার্বিক কাজ তদারকি করতে পারে।
বর্তমান বাজারব্যবস্থা অচল থাকায় ধান বিক্রি করে কৃষি শ্রমিকের মজুরি দিতে হলে কৃষকরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেননা তারা ন্যা্য্য মূল্য পাবে না। এক্ষেত্রে কৃষি শ্রমিকের মজুরি কৃষির জন্য যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে তা থেকে প্রদান করা যেতে পারে । এটা কৃষকদের তাৎক্ষণিক ভুর্তকি হিসেবে বেশ কার্যকর হতে পারে।
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ
অধ্যাপক
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
Email: s.a.hamid73@gmail.com
24 November, 2020 |
17 July, 2020 |
24 May, 2020 |
24 May, 2020 |
21 May, 2020 |
10 May, 2020 |
10 May, 2020 |
04 May, 2020 |
03 May, 2020 |
03 May, 2020 |
02 May, 2020 |
02 May, 2020 |
02 May, 2020 |
02 May, 2020 |
30 April, 2020 |
30 April, 2020 |
29 April, 2020 |
29 April, 2020 |