১. ডাকসু এবং হল সংসদ সমূহের নির্বাচন পরবর্তীতে আমাদের কাছে দাখিলকৃত আবেদনপত্র বা দরখাস্তগুলো আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করছি। আমাদের বিশুদ্ধতার জন্য আমরা যেক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেক্ষেত্রে আইনগত মতামতও নিয়েছি। আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত বিজ্ঞ আইনজীবীদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকটি দরখাস্ত/আবেদনপত্র বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে জবাব প্রদান করব, কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো গত ২২/০৯/২০২৫ ইং তারিখ সোমবার একটি ছাত্রসংগঠন কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে (মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি) উচ্চারিত কিছু অভিযোগের জবাব এই মুহুর্তে প্রদান করা সমীচীন বলে মনে করছি। সেক্ষেত্রে দুটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। একটি হলো কয়েকজন দরখাস্তকারী/আবেদনকারী আমাদের কাছ থেকে নির্বাচনের দিন ধারণকৃত এবং পরবর্তীতে সংরক্ষণকৃত সিসিটিভি ফুটেজের পুরোটাই চেয়েছেন। আমরা বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করেছি এবং বিজ্ঞ আইনজীবীদের মতামতও নিয়েছি। সিসিটিভি ফুটেজ কোন পাবলিক ডকুমেন্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ধারণকৃত এবং সংরক্ষণকৃত সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আমানত যা নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাহায্যকারী সাক্ষ্য হিসাবে বা ডকুমেন্ট হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। আমরা আবেদনপত্রগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছি। আবেদনপত্রগুলো অনেকটাই অস্পষ্ট (vague) এবং সুনির্দিষ্ট কি কারণে, কোন সময়ের, কোন বিষয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে হবে তা দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়নি। এমতাবস্থায় কতিপয় দরখাস্তে কতগুলো সাধারণ প্রশ্নমালা (Broad Questions) কিংবা কতগুলো অত্যন্ত ব্যাপকতর বিষয়ে (wide area) প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে যেগুলোতে তেমন কোন সারবত্তা নেই এবং আবেদনকারীগণের সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগও নেই। তথাপি কোন প্রার্থী যদি সুনির্দিষ্ট কোন সময়ের/কোন একটি প্রাসঙ্গিক ঘটনা পর্যালোচনা করার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চান তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত বিশেষজ্ঞ বা মনোনীত ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত কোন স্থানে তা দেখতে বা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
২. দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি বলা হয়েছে সেটি হলো ভোটপ্রদানকারী ভোটারদের স্বাক্ষরিত তালিকা প্রদানের অনুরোধ। এই ক্ষেত্রেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ/নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ মনে করে এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গোপনীয় (Private document) তালিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিতে এটির কপি প্রদানের কোন বিধান নেই। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভোটকেন্দ্রে এসে, প্রাথমিক তথ্যাদি প্রদান করে, ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে যে তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন সে তালিকাটি একটি অত্যন্ত গোপনীয় তালিকা। এটিও কোন পাবলিক ডকুমেন্ট নয়। সুতরাং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংরক্ষণের স্বার্থে এটি দেয়া কর্তৃপক্ষ যথাযথ মনে করে না। অধিকন্তু দরখাস্ত/আবেদনপত্রে উক্ত স্বাক্ষরিত তালিকা কেন দরকার, কি কারণে প্রয়োজন, কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সে তালিকার দরকার হয়েছে সেটিও সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। অতএব কতগুলো অস্পষ্ট, সারবত্তাহীন আবেদনের প্রেক্ষিতে এ গুরুত্বপূর্ণ তালিকার কপি প্রদানে কর্তৃপক্ষ সবিনয়ে অপারগতা প্রকাশ করছে। উল্লেখ্য, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থী আদালতে রিট আবেদন করেন। তাদের দাবি ছিল সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত করা এবং উন্মুক্ত তালিকা থেকে নারী শিক্ষার্থীদের ছবি অপসারণ করা। উক্ত রিটের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই সময় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভোটার তালিকা উন্মুক্ত রাখা বন্ধ ঘোষণা করে। এ অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করে, ভোটপ্রদানকারী ভোটারদের স্বাক্ষরিত তালিকা প্রকাশ করা সমীচীন নয়।
৩. ব্যালট পেপার ছাপানোর প্রতিষ্ঠান/ভেন্ডরদের পরিচয় সচেতনভাবে গোপন রাখা হয়েছে। এই গোপনীয়তা রক্ষা একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। এখানে নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে, সমস্ত নিয়ম মেনে একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া/দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে একটি পরীক্ষিত ও দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ব্যালট পেপার ছাপানোর পরে নির্দিষ্ট পরিমাপে কার্টিং করে তা ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যানিংপূর্বক মেশিনের পাঠযোগ্যতা নিশ্চিত করে (machine readability) সিলগালাকৃত প্যাকেটে সরবরাহ করেন। যে ওএমআর মেশিনে স্ক্যানিং করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করা হয় তা নীলক্ষেতের কোন দোকানে সম্ভব নয়। সুতরাং যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ করা হয়েছে তাতে এটি অরক্ষিত থাকার সুযোগ নেই। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যালট পেপার মুদ্রণ একটি বিশেষায়িত প্রক্রিয়া। এর প্রতিটি পর্যায়ে নিবিড় তত্ত্বাবধান ও নির্বাচন কমিশনে কঠোর তদারকি ছিল। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট পেপার পাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা/কেন্দ্র প্রধান সিগনেচার করেন। পরে ভোটারদের তা সরবরাহ করা হয়। এছাড়া নির্বাচনের আগে-পরে বা গণনার সময়ও সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিকসহ কেউই এ বিষয়ে কোন অভিযোগ উত্থাপন করেননি। ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই ব্যালট বাক্স পরীক্ষা করা হয়েছে, খালি বাক্স নিশ্চিত করার পর তা সিলগালা করা হয়। তাছাড়া বণ্টিত ব্যালট পেপার ও প্রদত্ত ভোটের সংখ্যার কোন গরমিল পরিলক্ষিত হয়নি। ভোটার কর্তৃক গৃহীত ব্যালট পেপার ও প্রদত্ত ভোটের মধ্যে অসামঞ্জস্য থাকলে বা কোনরকম অভিযোগ থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতাম। এরকম কিছুই ঘটেনি। অতএব নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর ব্যালট পেপারের মুদ্রণ নিয়ে এহেন অভিযোগের কোন ভিত্তি আছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে না।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সকল আবেদন/দরখাস্ত/অভিযোগ পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। যথাসময়ে প্রত্যেককে জবাব/সিদ্ধান্ত প্রেরণ করা হবে।
২৪/০৯/২০২৫
ফররুখ মাহমুদ
উপ পরিচালক
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।