ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগে সম্প্রতি একটি গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা ঢাকা শহরের যুবকদের গ্যাং সংগঠনের গঠন, কার্যপ্রণালী, উপ-সংস্কৃতি, অপরাধ এবং সহিংসতার উপর গভীর আলোকপাত করেছে। এই গবেষণার শিরোনাম "Unveiling the Youth Gangs of Dhaka: A Comprehensive Study on their Sturctures, Operations, Subculture and Violence"। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে, যা শহুরে অপরাধের মূল কারণগুলো অনুসন্ধান করে সমাজের জন্য একটি নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।
এই গবেষণার প্রধান অনুসন্ধানকারী (Principal Investigator) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারপার্সন এবং সহযোগী অধ্যাপক শাহারিয়া আফরিন। তাঁর নেতৃত্বে এবং সহ-অনুসন্ধানকারী (Co-Investigator) প্রভাষক ফাবিহা মাহবুবের সহযোগিতায় বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দক্ষ গবেষক দল এই কাজটি সম্পন্ন করেছে। গবেষণাটি ঢাকা শহরের যুবকদের গ্যাং সংগঠনের জটিলতা উন্মোচন করে, যা শুধুমাত্র অপরাধের পরিসংখ্যান নয়, বরং সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কারণগুলোকেও বিশ্লেষণ করেছে। এই উপস্থাপন অনুষ্ঠানে গবেষক দল তাদের ফলাফলগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে, যা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আলোচনা এবং নতুন চিন্তার খোরাক তৈরি করেছে।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, ঢাকা শহরের যুবকদের গ্যাং সংগঠনগুলো একটি সুসংগঠিত গঠন অনুসরণ করে, যেখানে নেতৃত্বের স্তরবিন্যাস, কার্যপ্রণালী এবং উপ-সংস্কৃতি একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই গ্যাংগুলোর সদস্যরা প্রায়শই অর্থনৈতিক দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, পরিবারের অস্থিরতা এবং শহুরে চাপের কারণে এই পথে প্রবেশ করে। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, এই গ্যাংগুলোর কার্যকলাপে চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা এবং সহিংসতার মতো অপরাধগুলো প্রধানত জড়িত, যা শহরের সামগ্রিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। তবে, গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন যে, এই সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র দমনমূলক নয়, বরং প্রতিরোধমূলক এবং পুনর্বাসনমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, যুবকদের জন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রোগ্রামগুলোকে শক্তিশালী করার সুপারিশ করা হয়েছে।
ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারপার্সন এবং প্রধান অনুসন্ধানকারী শাহারিয়া আফরিন বলেন, "এই গবেষণা আমাদের শহরের যুব সমাজের একটি অন্ধকার দিক উন্মোচন করেছে, কিন্তু একই সাথে আশার আলো দেখিয়েছে। আমরা দেখেছি যে, গ্যাং সংস্কৃতি শুধু অপরাধের ফল নয়, বরং সামাজিক অসমতুল্যতার প্রতিফলন। এই ফলাফলগুলো নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করবে, যাতে তারা যুবকদের সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থায়ন এবং বিভাগের সহযোগিতায় এই কাজ সম্ভব হয়েছে, যা আমাদের গবেষণা কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করেছে।"
সহ-অনুসন্ধানকারী ফাবিহা মাহবুব যোগ করেন, "আমাদের গবেষক দল, যা বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত, এই প্রকল্পে তাদের উৎসাহ এবং দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। আমরা ফিল্ডওয়ার্ক, ইন্টারভিউ এবং ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই ফলাফলগুলো সংগ্রহ করেছি, যা শুধুমাত্র একাডেমিক নয়, বরং বাস্তবিক প্রয়োগের জন্যও উপযোগী। এই গবেষণা আমাদেরকে বুঝিয়েছে যে, যুবকদের গ্যাং থেকে দূরে রাখতে সমাজের সকল স্তরের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।"
এই উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক এবং বহিরাগত বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন, যারা গবেষণার ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন এবং ভবিষ্যত গবেষণার দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। গবেষণাটি ঢাকা শহরের অপরাধের ধরণ বুঝতে সাহায্য করবে এবং সরকারি, বেসরকারি সংস্থা এবং সমাজসেবীদের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে কাজ করবে। এটি দেখায় যে, ক্রিমিনোলজি বিভাগ শুধুমাত্র তত্ত্বীয় জ্ঞান নয়, বরং বাস্তব সমস্যার সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগ বাংলাদেশের অপরাধবিজ্ঞান অধ্যয়নের ক্ষেত্রে একটি অগ্রণী প্রতিষ্ঠান, যা ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভাগটি অপরাধের কারণ, প্রতিরোধ এবং ন্যায়বিচার ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে, যা দেশের সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।