ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম গতিশীল করা, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়ন, বিভিন্ন সংকট নিরসন, সহশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম জোরদার এবং আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানকে আরও সম্মানজনক পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত এ সপ্তাহের বিভিন্ন উদ্যোগের হালনাগাদ তথ্য পরিবেশিত হলো :
১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফলের জন্য ৩টি ক্যাটাগরিতে অনুষদের ১৭টি বিভাগের মোট ১৫৬ জন শিক্ষার্থী এবং দেশে/বিদেশে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ এবং স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত মৌলিক প্রবন্ধের জন্য চারটি ক্যাটাগরিতে ১০ জন শিক্ষক ডিনস অ্যাওয়ার্ড পান।
২। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গত ১৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল, হোস্টেল ও প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো ব্যাজ ধারণ। এ উপলক্ষ্যে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সকাল সাড়ে ৭টায় জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জগন্নাথ হলের অক্টোবর স্মৃতি ভবনস্থ টিভি কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, হল প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় নিহতদের প্রতিকৃতি চিত্র ও তথ্যপ্রমাণাদি প্রদর্শন করা হয়। বাদ মাগরিব বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআ’সহ সকল হল মসজিদে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
৩। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ডাকসু ও জগন্নাথ হল সংসদের যৌথ উদ্যোগে "মরণ সাগর পরে তোমরা অমর তোমাদের স্মরি" শীর্ষক দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। জগন্নাথ হলে আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিল আর্টক্যাম্প, বারোয়ারী বিতর্ক এবং কুইজ প্রতিযোগিতা। কর্মসূচিতে অক্টোবর ট্র্যাজেডি সম্পর্কিত বিভিন্ন চিত্রকর্ম প্রদর্শনী হয়। এছাড়া স্বেচ্ছায় রক্ত দানকারী সংগঠন বাঁধনের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান শেষ হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ২৬ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
৪। (ক) ফিলিস্তিনে চলমান ইসরাইলি গণহত্যা ও আগ্রাসনের প্রতিবাদ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে ‘রক্তাম্বর’ শীর্ষক কবিতা আসর চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়। ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক প্রতিরোধ, “অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড” এর দুই বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ডাকসু এই কর্মসূচির আয়োজন করে। ডাকসুর ভিপি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উপাচার্য অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। (খ) অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শিল্পী সামিনা জামান-এর “সময়ের চিত্রকাব্য” শিরোনামে আলোচনা ও একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। (গ) অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শিল্পী খলিফা পলাশ-এর “Bangla Miniature & Nano Painting“ নামে একটি একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
৫। (ক) কবি জসীম উদ্দীন হল সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণের সঙ্গে হলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ক্যান্টিন ও দোকান পরিচালনাকারীদের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকগণের উপস্থিতিতে সভায় সৌহার্র্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয় এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ হলে সেবার মান উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়া হলের ক্যান্টিন ও দোকানে খাবার পরিবেশনে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের বিষয়ে ক্যান্টিন ও দোকান পরিচালনাকারীদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। (খ) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কবি জসীম উদ্দীন হলে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে হলের প্রাধ্যক্ষ, হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণসহ হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। (গ) হলের শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিতের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত সবগুলো ফিল্টার সার্ভিসিং করা হয়েছে। (ঘ) হলের গেস্টরুম ও অজুখানায় হ্যান্ডওয়াশ পুশ স্থাপন করা হয়েছে। (ঙ) হলে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশরুম ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ওয়াশরুমে এয়ার ফ্রেশনার সরবরাহ করা হয়েছে।
৬। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে সিট প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে। হলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার স্বার্থে পরিষ্কারক দ্রব্যাদি ক্রয় করা হয়েছে। হলে নিয়মিত মশার ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে।
৭। (ক) অমর একুশে হলে ২১টি সিসিটিভি ক্যামেরা, অতিরিক্ত একটি DVR এবং একটি মনিটর যুক্ত করে হলের প্রতিটি ফ্লোরকে সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। (খ) হলের বিভিন্ন ভবনের মোট ৫০টি আবাসিক কক্ষ, ক্যান্টিন (রুচিরা), অতিথি কক্ষ (কিছুক্ষণ), করিডোর এবং প্রধান গেইট রং করা হয়েছে এবং ৬০টি কক্ষে ছারপোকার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। (গ) হলে “বুলিং এবং র্যাগিং” এবং “যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন ” সংক্রান্ত ২টি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। (ঘ) এছাড়াও হলের ডাইনিং (রসনা) এ বিভিন্ন ধরনের ৮৮টি তৈজসপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। হলের পাঠকক্ষের ১টি কক্ষে ফ্যান এবং লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
৮। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক ছাত্রীদের নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহের জন্য ৫ম তলায় একটি পানির ফিল্টার স্থাপন করা হয়েছে। হল ডাইনিং এর রান্নাঘরের চুলা মেরামত ও স্টার বার্নার পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।
৯। গোবিন্দ দেব দর্শন গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে “Spivak’s Deconstruction of Western Epistemology: Reframing the Native Informants” শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাহমিনা ইয়াসমিন শোভা।
১০। ‘ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তা এবং স্থানীয়করণের সংযুক্তি-বাংলাদেশে চীনা ভাষা শিক্ষার উচ্চমানের উন্নয়নের যাত্রা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে চীনা ভাষা শিক্ষা বিষয়ক ৫ম ফোরাম আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে Bangladesh Chinese Language Teachers Association প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ঘোষণা করা হয়। এ উপলক্ষ্যে আয়োজক ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করেন। উদ্বোধনী পর্ব শেষে অনুষ্ঠিত হয় দুটি একাডেমিক সেশন। যেখানে চীন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকরা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
১১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট (ইয়েস) ক্লাবের উদ্যোগে এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর সহযোগিতায় “তথ্য অধিকার আইন-২০০৯” শীর্ষক ওরিয়েন্টেশন ও কুইজ প্রতিযোগিতা ইনস্টিটিউটের শহীদ ড. মো. সাদত আলী কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৬০ জন শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন ইয়েস গ্রুপের উপদেষ্টা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইআর-এর পরিচালক।
১২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শরৎ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। চারুকলা অনুষদ, সংগীত বিভাগ, নৃত্যকলা বিভাগ, নাট্যকলা বিভাগ ও ডাকসু যৌথভাবে এই উৎসব আয়োজন করে।
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত)
জনসংযোগ দফতর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়